আর্থিক লেনদেনে কোটি মানুষের জীবনের অনুষঙ্গ

এক যুগ আগে কাউকে টাকা পাঠানো বা পরিষেবার বিল পরিশোধের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর বিকল্প ছিল না। তখন হয়তো অনেকেই ভাবেননি, ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে এসব আর্থিক সেবা পাওয়া যাবে কিংবা ব্যাংকে টাকা জমানো বা ব্যাংক থেকে তাৎক্ষণিক ছোট অঙ্কের ঋণ মিলবে মোবাইল ফোনেই। এখন নিজের সুবিধাজনক সময়ে ঘরে বসেই মিলছে সব ধরনের ডিজিটাল আর্থিক সেবা। এক যুগ আগে চালু হওয়া মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশ হয়ে উঠেছে এসব সেবা গ্রহণের প্রধান মাধ্যম। ফলে ছোট আর্থিক লেনদেন ও সেবা নিতে ভোগান্তি এখন ইতিহাস। আর্থিক সেবা চলে এসেছে সব শ্রেণির মানুষের হাতের মুঠোয়, যা জীবন সহজ করেছে। ডিজিটাল লেনদেনে নির্ভরতা বেড়েছে সব শ্রেণির মানুষের।

 বিকাশ এখন শুধু টাকা স্থানান্তর বা বিল পরিশোধের মাধ্যম নয়। কেনাকাটা, সঞ্চয়, বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোসহ আরও অসংখ্য সেবা যুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবার মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিকাশ। আর্থিক লেনদেনে জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। আরও অনেক প্রতিষ্ঠান একই ধরনের সেবা চালু করলেও মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা মানেই বিকাশ করা এখন সুপরিচিত। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে মোবাইল আর্থিক সেবা সহজলভ্য করতে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট নিয়ে বিকাশ তৈরি করেছে সবচেয়ে শক্তিশালী এজেন্ট নেটওয়ার্ক। এমএফএস সেবা দিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এজেন্টরা তাদের এলাকার নির্ভরযোগ্য মানুষ হয়ে উঠেছেন।

 

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এমএফএস হিসেবে বিকাশ যাত্রা শুরু করে। বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ১২ বছরের পথচলায় সাত কোটি ভেরিফায়েড কাস্টমারের যে বিশাল পরিবার সৃষ্টি হয়েছে, তারাই নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে বিকাশের ওপর তাদের আস্থা রেখেছেন। এ অর্জনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা ও সরকারের দিকনির্দেশনা, যার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজটা সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের একটা যথার্থ সহযোগী হিসেবে বিকাশ কাজটা করতে পেরে পুরো দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা মনে করি, এ সাফল্য আজকে শুধু বিকাশের নয়, পুরো বাংলাদেশের। প্রত্যেক বাংলাদেশি এ অর্জনের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন।

 

ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা এবং সীমিত ব্যাংকিং সুবিধায় থাকা জনগোষ্ঠীকে গত এক যুগে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নিয়ে এসেছে বিকাশ। প্রত্যন্ত গ্রাম হোক বা ছোট্ট গ্রাম্য বাজার কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র হোক, বিকাশের মাধ্যমেই মূলধারার অর্থনৈতিক সেবায় যুক্ত হয়েছেন গ্রাহকরা। বিকাশের নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে ৪৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ফলে বিকাশ থেকে ব্যাংক বা ব্যাংক থেকে বিকাশ লেনদেন এখন গ্রাহকের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আমূল বদলে দিয়েছে।

 

বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব ধরনের বিল পরিশোধ সাধারণের জন্য একদম সহজ করেছে বিকাশ। পাশাপাশি সব সরকারি সেবার ফি দেওয়া যাচ্ছে । ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপবৃত্তি, প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন আর্থিক সহায়তা ভাতা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় খামারিদের প্রণোদনা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ভাতা এবং রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের বেতনসহ সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি উপকারভোগীর কাছে ভাতা ও প্রণোদনা পৌঁছে দিয়েছে বিকাশ। সরকারের বেতন-ভাতা-সহায়তা বিতরণের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ।

 

বিকাশ এখন শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশে বসেও বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে হিসাব খোলা যাচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৯০টির বেশি দেশ থেকে ৮০টির বেশি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান হয়ে দেশের ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় রেমিট্যান্স। ২০২২ সালে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স আসে বিকাশে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই যা ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

 

শুধু সঞ্চয় নয়, বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ঋণও মিলছে। এ জন্য সিটি ব্যাংক ও বিকাশ যৌথভাবে ২০২১ সালে দেশের প্রথম ডিজিটাল ন্যানো লোন চালু করে। এখন বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলছে। এখন পর্যন্ত গ্রাহকরা ২৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, যার মধ্যে ২৩০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ হয়ে গেছে।