ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগ চায় বিএসইসি

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে দেশি-বিদেশি সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশের মধ্যে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বিএসইসি বলেছে, অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ ওই সীমার অনেক কম রয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করারও অনুরোধ দিয়েছে সংস্থাটি।

সাম্প্রতিক সময়ে বড় দরপতনের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোকে নতুন বিনিয়োগের এ আহ্বান জানাল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিমের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়ালে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে এবং শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক ধারা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি বলেছে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার মূলত ব্যক্তি বিনিয়োগনির্ভর। এ বাজারের ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে। শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার স্বার্থে লেনদেনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির উদ্যোগকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএসইসি বলেছে, এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের অনুমোদন দেয়। এ বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইনে বর্ণিত ব্যাংকগুলোর নিয়মিত বিনিয়োগ এক্সপোজারের অংশ হবে না।

বিএসইসির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সব ব্যাংক মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে। যদিও অনেক ব্যাংকের বর্তমান বিনিয়োগ এক্সপোজার এর সর্বোচ্চ সীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, কার্যক্রমে থাকা ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৩টি ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া ২০০ কোটি টাকার বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে। এখনও তহবিল গঠন করেনি ২৮টি ব্যাংক। ৩৩টি ব্যাংক করলেও সেগুলো যথেষ্ট বিনিয়োগ করছে না। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়িয়ে এ বাজারের উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকেও এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার আগে কার কত বিনিয়োগ রয়েছে, সে তথ্য সংগ্রহ করে বিএসইসি। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিনিয়োগের আহ্বান জানায় সংস্থাটি। বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে বর্তমানের তুলনায় অন্তত ২ শতাংশ এক্সপোজার বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। যেসব ব্যাংক এ শর্ত মানবে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশিত টায়ার-১ এবং টায়ার-২ মূলধন পর্যাপ্ততা নিশ্চিতে বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব 'সুপার ফার্স্ট ট্র্যাক'-এ অর্থাৎ খুবই দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসইসি।

এর আগে গত ১ মার্চ ১১টি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকের বৈঠকে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদের দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ কারণে অতীতে বিনিয়োগ করে যতটুকু মুনাফা করেছিল, তার থেকে বেশি লোকসান হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ কর্মকর্তারা শেয়ারবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে আগ্রহী নন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন কোনো সমস্যা নয় বলেও জানান তারা।

বিএসইসি জানিয়েছে, যে ২৮ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠন করেনি সেগুলো হলো- ব্র্যাক, সিটিজেনস, ডাচ্‌-বাংলা, বাংলাদেশ কমার্স, মধুমতি, ন্যাশনাল, পদ্মা, সীমান্ত, বেঙ্গল কমার্শিয়াল, আইসিবি ইসলামিক, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট, বেসিক, রূপালী, সোনালী, বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ, সিটিব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, এইচএসবিসি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি। এসব ব্যাংককে তহবিল গঠনের অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।