ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে কাজ করছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম

কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ, জাত ‍উদ্ভাবন ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড। দেশের ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইসলাম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি ৮টি ফসলের মোট ৪১০ প্রজাতির জাত উন্নয়নে গবেষণা করছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ছাড়াও তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করেছে। অতি শিগগিরই এসব জাত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে অনুমোদন চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের গবেষণাকৃত ৮টি ফসলের মধ্যে ৮০ প্রজাতির ধান, ৯ প্রজাতির ভুট্টা, ১১২ প্রজাতির টমেটো, ৯ প্রজাতির করলা, ৫ প্রজাতির লাউ, ৮ প্রজাতির শসা, ৩১ প্রজাতির পেঁয়াজ ও ১৫৬ প্রজাতির পেঁপে রয়েছে।

এসব জাত উন্নয়নের জন্য ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইআরআরআই), বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চীনা গবেষণা ভিত্তিক কোম্পানি, থাইল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি ও ভারতীয় কোম্পানির সাথে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি গবেষণা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এসব গবেষণায় অভূতপূর্ব সফলতা এসেছে। সফলতার ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি কিছু মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব জাত অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের কৃষিতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (বীজ) মো. ফজলুল হক বলেন, আমরা লবণ ও জলবায়ু সহিষ্ণু বিভিন্ন ফসলের জাত উন্নয়নে কাজ করছি। এটি দেশের খাদ্য উৎপাদনকে সমৃদ্ধ করবে একইসাথে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখবে। 

 

বাড়বে পেঁপের ফলন ও মিষ্টির তীব্রতা, কমবে পচনশীলতা

পেঁপের ফলন ও মিষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি এবং পচনশীলতা রোধ করতে ১৫৬টি পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড। এ বিষয়ে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (বীজ) মো. ফজলুল হক বলেন, পেঁপেকে আমাদের দেশে অর্থকারি ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে যেসব পেঁপে চাষাবাদ হচ্ছে সেগুলোর ফলন আশানরূপ হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো নারী ও পুরুষ বীজের সংমিশ্রণ না হওয়া। বীজের মধ্যে যদি কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুরুষজাতীয় বীজ না থাকে তাহলে কোন কৃষক পেঁপে চাষ করে লাভবান হবে না। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের পেঁপের বীজের মধ্যে নারী-পুরুষ বীজের সংমিশ্রণ সঠিক পরিমানে থাকবে।

তিনি বলেন, বিদেশি জাতের পেঁপের ফলন বেশি হলেও দেশি পেঁপের তুলনায় মিষ্টির পরিমাণ খুবই কম। আমরা এটি নিয়েও কাজ করছি। আরেকটা বিষয় আমরা লক্ষ্য করি পেঁপে খুব দ্রুত পচনশীল ফল। কাঁচা বা পাকা কোন পেঁপেই খুব বেশিক্ষণ বাহিরে রাখা যায় না। আমরা পেঁপেতে এমন একটি উপাদান ব্যবহার করবো যেটির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনেটিক উন্নয়ন করবে এবং পচনশীলতা রোধ করবে। ফলে দূর-দূরান্তে পেঁপে পরিবহন করা যাবে।

 

অ-মৌসুমেও ঠিক থাকবে টমেটোর ফলন

এদিকে অ-মৌসুমেও যেন টমেটোর ফলন ঠিক রাখা যায় সেটি নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। মো. ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশে বছরে দুইবার টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রর উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখতে পেয়েছি সেটি হলো, এটির ফলন তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। বেশি তাপমাত্রায় এ টমেটোর ফুল আসে না। এটা আমাদের জন্য মারাত্মক সমস্যা। আমাদের লক্ষ্য এই টমেটোগুলো গ্রিষ্মকাল ও শিতকাল দুই মৌসুমেই চাষযোগ্য হবে। একইসাথে অ-মৌসুমেও ফলন হবে মৌসুমের মতো।

 

জলবায়ু সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল চিকন ধানের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্য

জলবায়ু সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল চিকন ধানের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড। মো. ফজলুল হক বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়েছে। মানুষ এখন আর মোটা ধানের ভাত খেতে চাই না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা উচ্চফলনশীল মাঝারি চিকন থেকে চিকন জাতের উদ্ভাবনে কাজ করছি। কেননা ফলন বেশি না হলে কৃষক চিকন ধান চাষ করতে আগ্রহী হবে না। আমাদের লক্ষ্য চিকন ধানগুলো হেক্টরপ্রতি ১০টন বা তার চেয়ে বেশি পরিমানে উৎপাদন করা।

আমাদের আরেকটি লক্ষ্য লবণ, জলবায়ু ও খরা সহিষ্ণু বিভিন্ন ধানের জাত উদ্ভাবন করা। কেননা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, শীতকালে পড়ছে না শীত এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে জমিতে লবনাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া আমরা দেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য খরা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করার উদ্যেগ নিয়েছি। বৃষ্টি না হলেও যেন ধানের ফলন কমে না যায় এমন জাত উদ্ভাবন করাই আমাদের লক্ষ্য।

অন্যদিকে আমরা সুগন্ধী জাতের ধান নিয়েও কাজ করছি। সুগন্ধী জাতের ধান হেক্টরপ্রতি ৩টন উৎপাদন হয়। আমরা ইতোমধ্যেই একটা জাত উদ্ভাবন করেছি যেটা হেক্টরপ্রতি ৪.৯ টন উৎপাদন হয়। আরো বেশি পরিমানে উৎপাদনের জন্য কাজ করছি।

 

পেঁয়াজের ফলন বাড়বে, সংরক্ষণ করা যাবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত

উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন, গ্রিষ্মকাল ও শীতকালে উৎপাদন করা এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে এমন পেঁয়াজ উদ্ভাবনে কাজ করছে আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড। এ বিষয়ে মো. ফজলুল হক বলেন, আমাদের দেশে শুধুমাত্র শীতকালে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায় এমন কোন পেঁয়াজ উদ্ভাবন করা যায়নি। এজন্য আমরা এমন জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। যে জাতটি গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে উৎপাদন করা যাবে। এছাড়া দুই মৌসুমেই উৎপাদনের পরিমাণ হবে হেক্টরপ্রতি ৯ থেকে ১১ টন। আমাদের দেশে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি পেঁয়াজের উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টন।

তিনি বলেন, এই পেঁয়াজের আরেকটি বৈশিষ্ট হবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। নরমাল কন্ডিশনেও সংরক্ষণ করা যাবে।

 

রবি ও খরিপ মৌসুমে ভুট্টার উৎপাদন হবে সমান

বাংলাদেশে রবি মৌসুম ও খরিপ মৌসুমে ভুট্টার চাষ করা হয়। বাংলাদেশে রবি মৌসুমে যে ভুট্টার উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১০ থেকে ১০.৫ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে, খরিপ মৌসুমে সেটির উৎপাদন হয় ৬ থেকে ৭ টন। আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড দুই মৌসুমেই চাষ করা যায় এমন ভুট্টা নিয়ে কাজ করছে। যেটির উৎপাদন মাত্রা দুই মৌসুমেই একই পরিমাণ হবে। এছাড়া লবনাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ভুট্টার জাত নিয়েও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

লবনাক্ত ও খরা সহিষ্ণু এলাকায় উৎপাদন হবে লাউ এবং করলা

আফতাব বহুমুখী ফার্ম লিমিটেড লাউ ও করলার লবনাক্ত ও খরা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়া বছরব্যাপী লাউ এবং করলার উৎপাদন নিশ্চিতকরণ ও ফলন বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।