গভর্নরের কাছে বিকেএমইএ'র চিঠি রপ্তানি আয় নগদায়নে ডলারের মূল্য পুনর্নির্ধারণ চান পোশাক মালিকরা

সম্প্রতি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের পৃথক মূল্যবিনিময় হার নির্ধারণ করেছে।

ওই মূল্য বিনিময় হারে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার হবে ১০৮ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে ২.৫ শতাংশ ইনসেনটিভ। অর্থাৎ মোট ১১০.৫০ টাকা ও রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ বিনিময় হার পাবেন ৯৯ টাকা। এতে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১১.৫০ টাকা।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) বলছে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় নগদায়নে সৃষ্ট ডলারের এ ধরনের বৈষম্যমূলক বিনিময় হার কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সমানভাবে অবদান রাখে। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ডলারের বিনিময়মূল্যও একই হওয়া উচিত। রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য একই হারে পুনর্নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছে বিকেএমইএ।

এ বিষয়ে গত শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সই করা একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কাছে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি খাত থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে, যার ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে।

দেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বিকেএমইএ নিট ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসেবে, নিট সেক্টরের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে, নতুন বাজার সম্প্রসারণে, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা টেকসই করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে নিট পোশাকখাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ২৩.২১ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৩৬.৮৮ শতাংশ বেশি। আমাদের তৈরি পোশাকে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামাল ও ডাইংয়ে ব্যবহৃত রঙ, কেমিক্যালের জন্য আমরা মূলত আমদানিনির্ভর।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম, পরিবহন খরচ ও শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সব পণ্যের দামবৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমতাবস্থায়, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পণ্য রপ্তানি করে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারমূল্যে আমদানি দেনা পরিশোধে ও রপ্তানি আয় নগদায়নের ব্যবধানের কারণে উদ্যোক্তারা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

আমদানি ও রপ্তানিতে সাম্যাবস্থা আনতে বিকেএমইএ'র পক্ষ থেকে চিঠিতে চারটি প্রস্তাব দেওয়া হয়।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাফেদার পাশাপাশি রপ্তানিখাতের বৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ'র মতামতকে যথার্থ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। এক্ষেত্রে ডলারের মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার থাকবে শুধু সরকারের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের।

২. বর্তমানে আমাদের বেশিরভাগ রপ্তানিমূল্য ডেফার্ড হয়ে যাচ্ছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৬০-১৮০ দিনের সময়সীমায় পৌঁছে যায়। অন্যদিকে, আমরা যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করছি, সে আমদানি দেনা পরিশোধের জন্য আমরা পাই ৯০-১২০ দিন।

আমদানি দেনা পরিশোধের জন্য ১০৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংকগুলো ব্যাক টু ব্যাক এলসি বা অন্য যেকোনো আমদানির দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০৫-১০৬ টাকা হিসাবে ডলার কিনে আমদানি দেনা পরিশোধ করছে।

অন্যদিকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা পেতে পারি। ডলার কনভার্সনের এ নীতিগত প্রক্রিয়াতেই আমরা বিশাল অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ প্রক্রিয়ার ফলে দেখা যাবে, বছর শেষে একটা বড় ধরণের শর্টফল তৈরি হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে এ শর্টফল কোনোভাবেই সমন্বয় করা সম্ভব হবে না।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আগের মতো ইডিএফের মাধ্যমে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দেনা পরিশোধ সমন্বয় করতে নির্দেশনা দিতে পারে।

৩. ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্যে কোনোভাবেই এক টাকার বেশি পার্থক্য রাখা যাবে না।

৪. দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের চাকা বেগবান রাখতে রপ্তানি আয় নগদায়নের ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য একই হারে পুর্নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।