সংকটের মধ্যে থাকা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে

সংকটে থাকা পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এবার চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মালিকানা ও নাম বদলে যাওয়ার পর ব্যাংকটির উন্নয়নে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার (সিএফও) সঙ্গে সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, সভায় প্রথমে পদ্মা ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, দ্রুতই এসএমই খাতে ঋণ দেওয়া শুরু হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে ব্যাংকটি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংককে পুনঃ অর্থায়ন দেয় না। সেখানে পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৬৭ শতাংশ।

ব্যাংকটির সূচক পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির সঙ্গে একটি চুক্তি হবে।

সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক পদ্মা ব্যাংকের চিত্র তুলে ধরে জানায়, একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেই এমওইউ তথা চুক্তির শর্তগুলো চূড়ান্ত করা হবে। এতে তিন বছরের মধ্যে ব্যাংকটির দৃশ্যমান উন্নতির লক্ষ্য থাকবে।

সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান এবং পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, পরিচালক ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান ও অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সভায় ব্যাংকটির সূচক পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির সঙ্গে একটি চুক্তি হবে।

পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সভা হয়েছে। ব্যাংকের উন্নয়নে একটি চুক্তি করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক সূচকে দুর্বল অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে সভা শুরু করেছে। সভার পর এসব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হবে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সভা করে।

এর আগে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের সঙ্গে সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো কোনো ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন বছর মেয়াদি এমওইউ সই করছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংকের সঙ্গে সভা করছে, তার সব কটিই ডুবতে থাকা ব্যাংক। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেসব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব ব্যাংকের বড় ঋণ অনিয়মের ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, সেগুলোও তদারকির মধ্যে আনা দরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কোনো কোনো ব্যাংকের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ খেলাপিযোগ্য বলে ধরা পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সভা হয়েছে। ব্যাংকের উন্নয়নে একটি চুক্তি করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেছি।

তারেক রিয়াজ খান, এমডি, পদ্মা ব্যাংক

পদ্মা ব্যাংকের নাম ফারমার্স ব্যাংক থাকাকালে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়ম হয়। যে কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে। এরপর এটির নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। গত জুন শেষে ব্যাংকটির ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৬৭ শতাংশ।