রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বরাদ্দ কমছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ প্রায় ৩ হাজার ৫৯০ কোটি কমিয়ে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে বরাদ্দ কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ পাওয়া সব টাকা ব্যয় করতে পারে না অনেক প্রকল্প। সেজন্য অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে এডিপির বরাদ্দ সংশোধন করা হয়। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। যার ফলে মূল এডিপি থেকে কমে আরএডিপি হচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দে বৈদেশিক ঋণ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আরএডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মোট প্রকল্প ১০৭টি। এসব প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। তবে মূল এডিপি থেকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দ আলাদা করেই দেখানো হয়। যদিও ১৫টি খাতের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি খাতেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।
গতকাল সকালে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আরএডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রের তথ্য বলছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। মেয়াদকাল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সাল পর্যন্ত। চলতি বছরের জানুয়ারি সময়ে ভৌত কাজের অগ্রগতি ৪৪ শতাংশ। সরকার চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ করেছিল এ প্রকল্পে। তবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেই আবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমানো হয়েছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এছাড়া পদ্মা রেল সংযোগের কাজ এগিয়ে নিতে এ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া ১০টি প্রকল্প: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। তবে বরাদ্দ ঠিক থাকছে মাতারবাড়ী ২ী৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টে। এ প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪) বরাদ্দ ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার ১৩৮ কোটিতে উন্নীত করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। পদ্মা রেল সংযোগের কাজ এগিয়ে নিতে ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ ৫৬৭ কোটি কমিয়ে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে। ৬৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে এখন বরাদ্দ ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় কমছে। এডিপিতে মেগা প্রকল্পের তালিকায় থাকা প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা আরএডিপিতে কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। সাসেক (সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) সড়ক সংযোগ প্রকল্প এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা হচ্ছে। যদিও এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এছাড়া বরাদ্দ কমছে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে। এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এখান থেকে বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায়। ফলে বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট তামাবিল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে আলাদা সার্ভিস লেন নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ছে। এ প্রকল্পে এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ফলে ঢাকা-সিলেট চার লেনে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৭৫ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাত: পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি (১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ), গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি (১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ), শিক্ষায় ২০ হাজার ৮২৪ কোটি (১০ দশমিক ০৩ শতাংশ), স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ)। ফলে শীর্ষ পাঁচটি খাতেই আরএডিপির প্রায় ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৪ কোটি ৯৮ লাখ, কৃষিতে ৭ হাজার ২৭৯ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি ৮৪ লাখ এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।